ঢাকা , শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫ , ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নোয়াবের উদ্বেগ গ্রহণ করলেও দায়ী নয় বলছে অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নোয়াবের উদ্বেগ বড় বড় অনুষ্ঠানে নারীদের যথাযথ জায়গা দেওয়া হয় না-প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে-আলী রীয়াজ বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রত্যাশা তারেক রহমানের আন্দোলন ঠেকিয়েও সমালোচিত সরকার শ্রম আইন সংশোধনসহ পোশাক শ্রমিক সংহতির ১১ দাবি তুহিনকে এভাবে হত্যা করবে এটা ভাবতেও পারছি না-নিহত সাংবাদিকের বাবা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৯০ জন নির্বাচনই সংস্কার সম্পন্ন করার শান্তিপূর্ণ পথ-সাকি প্রাথমিক শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১১তম গ্রেড, বেতন বাড়বে কর্মকর্তাদেরও ন্যায্য ও বাসযোগ্য শহর গড়তে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে-ডিএনসিসি প্রশাসক ভোটার হওয়ার জন্য অর্ধলক্ষ প্রবাসীর আবেদন শক্তিশালী জোট গঠনে তৎপর জামায়াত হানিট্র্যাপের ঘটনা ভিডিও করাই কাল হয়েছে সাংবাদিক তুহিনের শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনের বিচার চলতি বছরেই যশোরে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আ’লীগ ও ভারতের জন্য বাংলাদেশে দাঙ্গা প্রয়োজনÑ গয়েশ্বর গাজীপুরে ট্রাভেল ব্যাগ থেকে অজ্ঞাত যুবকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রির আড়ালে মাদক ব্যবসা গ্রেফতার ১

হানিট্র্যাপের ঘটনা ভিডিও করাই কাল হয়েছে সাংবাদিক তুহিনের

  • আপলোড সময় : ০৯-০৮-২০২৫ ০২:৪৮:০০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৮-২০২৫ ০২:৪৮:০০ অপরাহ্ন
হানিট্র্যাপের ঘটনা ভিডিও করাই কাল হয়েছে সাংবাদিক তুহিনের
* গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডে পাঁচজন গ্রেফতার করেছে পুলিশ
* হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে থানায় মামলা
* বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনে দাবি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে সাংবাদিক সমাজ
* হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে থানায় মামলা
* বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনে দাবি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে সাংবাদিক সমাজ
 
গাজীপুর থেকে ওবাইদুল ইসলাম
গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা গাজীপুর চৌরাস্তা ঈদগাহ মাঠে সাংবাদিক তুহিনের জানাজায় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক ব্যাক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। গাজীপুরের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানাজার শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। গতকাল বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকরা সংগঠনের ব্যানারে মানবন্ধন করেছে।
গত বৃহস্পতিবার বাদশা নামে এক ব্যক্তির উপর হামলার ভিডিও ধারণ করায় সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে খুন করেছে সিসি ফুটেজ দেখে ধারণা করছে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজে পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। গাজীপুরের চন্দনা চৌরাস্তার পশ্চিম পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শাপলা ম্যানশনের সামনে। হঠাৎ কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন। এসময় পেছন থেকে নীল শার্ট পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে টেনে ধরেন। কিন্তু নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড় থাপ্পড় মারেন। ঠিক এমন সময় পাশ থেকে কয়েকজন যুবক হাতে রামদা ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে তাকে কোপানোর চেষ্টা করে। তখন ওই ব্যক্তি দৌঁড়ে পালিয়ে যান। ঘটনার কিছু সময় আগে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন সাংবাদিক তুহিন ও তার সহকর্মী শামীম হোসেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামীম বলেন, চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন একদিক থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় এক নারী ও পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যায়। তখন কয়েকজন লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, এই পাইছি তোরে আয়। এ সময় তারা রামদা বের করলে ওই লোকটা দেঁৗঁড় দেয়। ঠিক ওই সময় সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে দৌঁড় দেয়। তখন আমার পাশ থেকে তুহিন মোবাইল নিয়ে ওদের পেছনে দৌঁড় দেন। তখন আমি ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। ফলে আমি আর তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। তখন দেখি, যারা রামদা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা হঠাৎ থেমে পেছন দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে তুহিন ওদের দিকে মোবাইল ধরে রেখেছে। এসময় ওদের সঙ্গে তুহিনের হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তখন তুহিন দৌড়ে চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগা মার্কেটের পূর্ব পাশে একটি দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও ওই দোকানে ঢুকে ওকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে নারীর সঙ্গে যেই ব্যক্তির ঝামেলা হয়েছিল সেই বাদশা মিয়া আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাদশা মিয়া বলেন, ওই মেয়েসহ একটা টিম আছে, ওরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তারা সবাই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে তিনিও তাদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের একজন হচ্ছে মিজান ওরফে কেটু মিজান, শাহ জামাল, বুলেট, অপর একজনের নাম সুজন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে তারা ছিনতাই করে থাকে। তবে এবার তারা ওই লোককে কেন কোপাতে গিয়েছিল সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদশা মিয়া নেই। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা-নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের মধ্যদিয়ে উত্তাল হয়ে উঠছে গোটা দেশ। সবার দাবি একটাই রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, বর্তমানে সাংবাদিকরা সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছেন। তবে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করেন। তাহলে তাদের টার্গেট করে হত্যা-নির্যাতন করা হচ্ছে কেন। যারা সাংবাদিকদের টার্গেট করে হত্যা করছে, অতিদ্রুত তাদের চিহিৃত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত না করলে এ পেশা ধ্বংশের দিকে ধাবিত হবে। একইসঙ্গে দেশজুড়ে নৈরাজ্য ও হানাহানি আরও উৎসাহিত করবে।
অপরদিকে গাজীপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফুটেজ শেয়ার করে অনেকে দাবি করেন ‘চাঁদাবাজির ঘটনা’র লাইভ ভিডিও করায় সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যমও একই দাবি করে সংবাদ পরিবেশন করে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদাবাজি নয়, এক যুবককে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় দুর্বৃত্তরা ওই সাংবাদিককে কুপিয়ে খুন করে। বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার ব্যস্ততম এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের ঈদগাহ মার্কেটে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বললেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকি কাটেনি। রাজনৈতিক পট পরির্বতনের এক বছরপূর্তিতে বৃহস্পতিবার গাজীপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফুটেজ শেয়ার করে অনেকে দাবি করেন ‘চাঁদাবাজির ঘটনা’র লাইভ ভিডিও করায় সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর একদিন আগে গাজীপুর মহানগরের সাহাপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, দুর্বৃত্তরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই বেধড়ক মারধর করলেও তা প্রতিরোধে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন সৌরভ (৩৫) এখন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গত বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, সৌরভকে অন্তত সাত-আটজন যুবক ঘিরে ধরে মারধর করছেন। এক পর্যায়ে তার মুখ ও মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। থেঁতলে দেওয়া হয় তার পা। এরপর টেনেহিঁচড়ে কিছু দূর নিয়ে যাওয়ার পর আবারও তাকে মারধর করা হয়। রাস্তার ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন সৌরভ। সৌরভের মা আনোয়ারা সুলতানা গাজীপুর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাহাপাড়া এলাকায় ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তার ছেলে হামলার শিকার হয়েছেন। আনোয়ারা আরও অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা তার ছেলে কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ ২৬ হাজার ২৫০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও সাংবাদিকদের ওপর হামলার আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে বিচারহীনতার দীর্ঘ সংস্কৃতির ইতি টানার আহ্বান সাংবাদিকদের। বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে সাংবাদিকরা হামলাকারীদের ‘সহজ টার্গেট’ হিসেবে বিবেচিত। তবে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত বছরের ৮ আগস্ট বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকারের তরফ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে সাংবাদিকরা সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছেন। এমনকি বিগত সরকারের সময়ে সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা নির্যাতন হয়েছিল, সেগুলোর বিচারের কথাও বলা হয়েছিল।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারেরর পক্ষে থেকে গত একবছর যাবত ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হলেও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা থামছে না। বাদ যাচ্ছে না সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের নির্যাতন ও হামলা। সম্প্রতি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সংবাদ প্রকাশের জেরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে হামলার শিকার হয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজন। হামলাকারীরা হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সুজনকে গুরুতর আহত করেন। এ সময় তাকে বাঁচাতে গেলে নিউজ টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশন ও জাগো নিউজের প্রতিনিধি বিধান মজুমদার অনি, দেশ টিভির সাইফুল ইসলাম আকাশ ও সময়ের কন্ঠস্বর প্রতিনিধি নয়ন দাসের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে সুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সোহাগ খান সুজন। আহত সোহাগ খান সুজন বলেন, যে রিপোর্টের কারণে এই হামলা, সেই রিপোর্ট কিন্তু আমার পত্রিকা সমকালে ছাপা হয়নি। তারপরও তারা আমাকে টার্গেট করে হামলা করেছে। ওই ঘটনায় স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ীসহ ৭ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পালং মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃতদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।
অপরদিকে, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, আমরা ধারণা করছি ওই মেয়েটিও ছিনতাইকারী দলের সদস্য। যে লোকটাকে ধাওয়া করেছে তার সঙ্গে ছিনতাইকারীরা কিছু একটা করেছে। যার কারণে ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে জখম করে ও ধাওয়া করে। ঘটনার পর থেকেই পুলিশের একাধিক টিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান জানান, হানিট্র্যাপে করে একটি মেয়েকে দিয়ে ট্রাপ করানো হতো। তারা বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে ট্রাপে ফেলে টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাতো। এরকম কয়েকটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে কাজ করতো বিভিন্ন জায়গায়। ঘটনার দিন বাদশা নামের এক লোককে ট্রাপে ফালানোর চেষ্টা করলে ওই লোক বুঝে ফেলে। পরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ওই নারীর সহযোগী আগে থেকে উৎপাতা ৫/৭জন ছেলে এসে ওই লোককে কোপাতে শুরু করে। এসময় ওই লোক যখন দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল এ ঘটনা ওই সাংবাদিক তুলছিল। পরে তাকে চিনে ফেলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। ইতিমধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, জুলাই রেভুলোশনারি জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্স কর্তৃক আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তুহিন হত্যার বিচার চাওয়ার জন্য আমাদের রাজপথে নামতে হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত খুনিদের গ্রেফতার করা হয়নি। আজ যদি ইন্টেরিমের কোনো উপদেষ্টার পরিবারের কাউকে খুন করা হতো, তাহলে কি গ্রেফতার এতো সময় লাগতো? লাগতো না। তিনি আরও বলেন, গত কয়েকবছরে সবচেয়ে বেশি হামলা-মামলা, খুনের শিকার হয়েছে যে পেশাজীবীরা, তারা হলেন সাংবাদিক। জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পর সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছে সাংবাদিকরা। অথচ আমরা কি পেলাম? আমাদের দিন-দুপুরে হত্যা করা হয়, আমরা কোনো নিরাপত্তা পেলাম না।
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের গৌরাঙ্গবাজার মোড়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব। মানববন্ধনে বলা হয়, শুধু সাংবাদিক তুহিনকে হত্যা নয়, গাজীপুরে আরেক সাংবাদিককে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সারা দেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। যা দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মানববন্ধন থেকে বক্তারা তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানান তারা। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কিশোরগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক মানবজমিনের জেলা প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক নয়া দিগন্তের জেলা প্রতিনিধি মো. আল আমিন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নিউ নেশনের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আলম সারোয়ার টিটু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কালের কণ্ঠ ও এটিএন নিউজের শফিক আদনান, প্রথম আলোর তাফসিলুল আজিজ, বাংলা ট্রিবিউন ও মাছরাঙা টেলিভিশনের বিজয় রায় খোকা, সংবাদের আবু তাহের, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির শাহজাহান সাজু, ডেসটিনির শামসুল আলম শাহীন, ইনকিলাবের মো. জাহাঙ্গীর শাহ্ বাদশাহ, কালের নতুন সংবাদের খায়রুল ইসলাম, আজকের পত্রিকার সাজন আহম্মেদ পাপন, আজকের বিজনেস বাংলাদেশের আতা মোহাম্মদ উবায়েদ, আজকের দর্পণের আসাদুজ্জামান খান লিপন, ডিবিসি ও দৈনিক বাংলার রাকিবুল হাসান রোকেল, এখন টিভির মশিউর রহমান কায়েস, দেশ টিভির তোফায়েল আহমেদ তুষার, খবরের কাগজের তাসলিমা আক্তার মিতু, নতুন দিনের মোহাম্মদ আবু সাঈদ, দেশের কণ্ঠের মো. আনোয়ার হোসাইনসহ অনেকেই। এ ছাড়াও মানববন্ধনে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক ভূঁইয়া, শুরুক নির্বাহী সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ সাইফ, সাউথ এশিয়ান টাইমসের মো. মনির হোসেন, জনবানীর মশিউর রহমান নাদিম, ভোরের কাগজের হারিছ আহমেদ, গণজাগরণের তন্ময় আলমগীর, বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভের মো. সাখাওয়াত হোসেন আকাশ, আজকের বাংলার মো. আলাউদ্দিন শুভ, মাইমশিল্পী রিফাত ইসলাম ও সাংবাদিক জাহিদ হাসান মুক্তার। এ সময় বক্তারা বলেন, একজন পেশাদার সাংবাদিককে এভাবে হত্যা শুধু একটি পরিবার নয়, সমগ্র সাংবাদিকসমাজকে আহত করেছে। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত, অপরাধীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পেশাজীবী সাংবাদিকরা। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি মাস্টার পাড়া সড়কের সামনে থেকে ঘুরে পুনরায় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাব সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও সাংবাদিকরা নিরাপদ নয়। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লেখালেখি করায় সাংবাদিকদের হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কলম ধরেছে বলেই পরিবর্তনের জোয়ার এসেছে। ভবিষ্যতেও যদি কেউ এ ধরনের দমননীতি অনুসরণ করে, তার পরিণতিও হবে একই। সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
গাজীপুরের চান্দানা চৌরাস্তায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সাংবাদিকরা। এ সময় তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। এতে ফুলবাড়িয়া ছাড়াও জেলার প্রিন্ট ইলেকট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সাংবাদিকরা। প্রয়াত এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে পুরো ফুলবাড়ীয়ায় গভীর শোক নেমে এসেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় গাজীপুর ঈদগাহ মাঠে জুমার নামাজের পর সাংবাদিক তুহিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ আসর নিজ গ্রামের বাড়ি ফুলবাড়িয়ার মধ্য ভাটিপাড়া গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) হত্যার ঘটনায় তার বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল এখন পাগল প্রায়। ছেলের মৃত্যুর খবরে ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ৬নং সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ভাটিপাড়ার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান তুহিন। শুক্রবার সকাল ১০টায় তুহিনের পরিবারের খোঁজ নিতে তাদের বাড়িতে যান ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক। এ সময় তার বাবা হাসান জামাল কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং আহাজারি করতে থাকেন। জানতে চান তার ছেলের কী অপরাধ, কেন তাকে হত্যা করা হলো? আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো? আমি কারো ক্ষতি চাই না, তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও। ছেলের শোকে কাতর হাসান জামাল বলেন, গত পরশু আমার ছেলে আমার জন্য ওষুধ কিনতে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছে। এখন কে আমার জন্য ওষুধের টাকা পাঠাবে। কেন ছেলেটাকে তারা মেরে ফেলল? ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে ভাটিপাড়া বাবার বাড়িতে ছুটে এসেছেন বড় বোন রত্না বেগমসহ অন্য স্বজনেরা। বৃদ্ধা মা সাহাবিয়া খাতুন বকুলকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করতে করতে রত্না বলেন, আমার ভাই আমার কোলে বড় হয়েছে। কেন আমার ভাইকে মানুষের হাতে প্রাণ দিতে হলো। সে তো কারো ক্ষতি করেনি।

তুহিনের মা সাহাবিয়া খাতুন বকুল বলেন, গত পরশু আমার ছেলে মোবাইলে কল করে আমার দুই নাতির সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছে। এরপর আর কোনো কথা হয়নি। আমার বাবারে কারা মারল, কী দোষ তার? তুহিনের বড় ভাইয়ের স্ত্রী নূরুন্নাহার বেগম বলেন, যারা তুহিনকে মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই। তারা মানুষ না, অমানুষ। এমন করে কেউ কোনো মানুষকে মারতে পারে না।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ